মা নিষাদ
‘শয়তান, তুই নরকে যাবি
পাপ-পুণ্যের
জ্ঞান নেই তোর,
শয়তান, তুই
নির্ঘাৎ নরকে যাবি
অভিশাপ দিচ্ছি
তোকে, তুই নরকে যাবি’
দস্যুর
নরকযন্ত্রণার ভয় নেই বুঝি?
সে ভয় তো
রাজাকেও ছাড়ে না,
রত্নাকর
দস্যুকুলশ্রেষ্ঠ।
তবে তার
যুক্তি ছিল,
‘ডাকাতিই তো
জানি শুধু করতে,
বৃদ্ধ
মাতা-পিতা, স্ত্রী-সন্তানদের আহার জোগাই খুন করে
ওহে ব্রাহ্মণ,
তুমি বৃথা ফন্দি আঁটো কেন?
পুণ্য-টুন্য
আমার দেখিয়ো না, মরার জন্য প্রস্তুত হও’
‘নিরপরাধদের
সর্বস্ব লুঠ করিস, গর্দান নিস,
তা কি তো
বাড়ির লোকে জানে’?
‘বলি না, বলতে
যাব কেন?’
কিন্তু বিবেক?
সে তো রত্নাকরেরও ছিল,
তখনও তো সে
রাম আর মরার মধ্যে
তফাত করতে
জানত না
বাড়ির লোক,
যাদের জন্য
সে অন্ন আনত
রক্তে হাত ধুয়ে,
তারাই যে তাকে
অভিসম্পাত দেবে,
ঘৃণার পাত্র
হবে সে, ভাবত না।
পাপের ভাগ কেউ
নেয় না,
সবাই পুণ্যের
জন্য কলসী খালি করে।
অতএব ফেরত
এসেই ব্রাহ্মণকে সে জিজ্ঞাসা করেছিল,
‘ঠাকুর, আমার
কী হবে?’
ব্রাহ্মণ
অবশ্য প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল,
‘সব
ছেড়েছুড়ে গাছের নীচে তপস্যা কর ব্যাটা বসে’,
‘তপস্যা আবার
কী জিনিস ঠাকুর?’
‘গাছের নীচে
চোখ বন্ধ করে বসে বলবি,
মরা...মরা...মরা...ম...রাম..রাম...রাম’।
এ দেশে কি তবে
দস্যুরাই রামায়ণ লেখে?
মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধঃ কামনোহিতম্!
রামের মধ্যে রাজনীতি তখনই প্রবেশ করেছিল কি তবে?
কামমোহিত ধর্ম যখন ভক্তের সঙ্গে মৈথুনে রত,
তখনই কি তবে জেনেবুঝেই বাণ মারে কোনও নিষাদ?
বাল্মিকী শাশ্বত, রামও, মরাও,
তবে দস্যুরাই হয়তো রামায়ণ লেখে।