গ্যারেজ
একটা পরিত্যক্ত গ্যারেজের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে একটা বাতিল গাড়ি
পাশের বাড়ির একটা বৃদ্ধ লোক জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে
অগোছালো চুল, ঝুরঝুরে প্যালেস্তারা
ঝাপসা হয়ে আসে চশমার কাচ
মাঝে মাঝে কাক এসে বসে কার্নিসে
কারর কোন তাড়া নেই একটুও
সামনের সড়ক দিয়ে বয়ে গেছে ট্রামলাইন
ঘন্টা বাজে। ধুলো ওড়ে
গ্যারেজে উঁকি মারে রাস্তার কুকুর
বাতিল গাড়ির গায়ে বিবর্ণ রঙ
হাওয়ায় নড়ে ওঠে মাকড়সার জাল
পরিত্যক্ত বাড়িটা থেকে এসবই দেখছে একজন বাতিল লোক
মাছ
তখন নেহাতই ছোট
বাবা স্নান সেরে গায়ত্রীমন্ত্র জপতে জপতে ধূপ দিত সারা বাড়ি
ঘর
ভরে উঠতো মায়াবী সুরে
আমি গুটিগুটি পায়ে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াতাম
আমার তেল জপজপে চুলে বাবা টেরি এঁকে দিত
যে
আসনে বাবা বসতো সেটা মার তৈরি, ফুল আঁকা
বাবা জল ছড়িয়ে খাওয়া শুরু করতো
মা
হাওয়া করতে করতে এক ঠায় তাকিয়ে থাকতো বাবার চোখের দিকে
একদিন মা বলেছিল ,নদীর মাছ খেতে বড় ইচ্ছে করে
বাবা জানিয়েছিল ফেরার সময় বাজার ঘুরে আসবে,
সেদিন অনেকরাত্রে বাবা বাড়ি ফিরেছিল
ফিসফিস করে বলেছিল, কারখানা লকআউট,
এর
মানে আমি বুঝিনি
আমি শুধু উঁকি মেরে খুঁজছি মার প্রিয় নদীরমাছগুলোকে
দেখেছিলাম,
মাছ নয়, দেখি থলির ভেতর ইয়া বড় একটা নদী খাঁ খাঁ করছে...
পুরনো আস্বাদন
বারান্দা জুড়িয়ে যায় সন্ধের হাওয়ায়
খেলাবাড়ি ছেড়ে নেমে আসে পুরনো শ্বাস
ভৌগোলিক রেখাগুলো ঘনিয়ে যায় শরীর ভাঁজে
ঘষে ঘষে তুলে ফেলি নখের দাগ
মনে পড়ে, হোটেল লাউঞ্জের সাপলুডো ?
অকালবর্ষণ। ঢেউ আর নোনাজলে কাটানো বিকেল
দাঁড়কাকের ডানায় ঢেকে যাওয়া আকাশ
সবটাই উদাস-যাপন, জিভের আস্বাদন
সেভাবেই থেকে গেছো, নিবিড় অবিরত তুমি
শুধু হাটখোলা বুকে জেগে নিষিদ্ধ তটভূমি
একটা জঙ্গল আর হরিণের গল্প
একটা জঙ্গল আর তার হরিণের গল্প দিব্যি শুরু হয়ে গেছে
এখানে কোন অরণ্য-বালিকার চিহ্ন নেই
গাছের পাতায় কোন অবাক-করা দৈববাণী নেই
নেই কোন ফুলেদের বিস্ফারিত হবার মন্ত্র
আবহাওয়ার সাথে রঙ পাল্টায় পাখিদের ডানা
চোখের ইশারায় নেমে আসে অকাল বারিশ
কোটরের ভেতর থেকে ডেকে ওঠে হারানো সুর
এসব শুধুই একটা গজব কাহিনীর শুরুটা
আসলে এর বেশি জমানো নেই কোন প্লট
কেবল জানি, কয়েকটা বিষন্ন হরিণ প্রতি জ্যোৎস্নায় জঙ্গলে অবগাহন করতে আসে
জীবন যে রকম
উপন্যাসটার প্রথম থেকেই একটা কার্নিভালের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে
প্রথম পৃষ্ঠাতেই জমজমাট নাটক
তোমার এলানো শরীর একটু সোজা হয়ে উঠলো
গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়ে মোড় নিলো কাহিনী
সিরিয়াস, কখনো সাসপিসিয়াস
ভালোবাসা, ব্যর্থতা,
রক্ত, খুন
জমে গেছে, জমে গেছে ভীষণ,
পেঁয়াজের খোসার মতো জুড়ে যাচ্ছে রহস্য
মাঝদরিয়া থেকে গল্প এগোচ্ছে তরতরিয়ে
রক্তের দাগ ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিটি পাতায়
ধৈর্য্য ধরো, ধৈর্য্য ধরো, ধৈর্য্য ধরো ক্রমশ
শেষপৃষ্ঠায় যাবার আগে আর একটু সংযত হও পাঠক
কাঁটাতার
আবহাওয়ার কোন পূর্বাভাস নেই
ফুল তার নিজগুণে জড়িয়ে নিচ্ছে রঙ
ভাঙনের পাড়ে খেলা করে কয়েকটা পানকৌড়ি
তাদের নিঝুম চোখে রাতের শিশির লেগে আছে
যে পথে নেমে এসেছে অন্ধকারের ঝালর
যে দিকে নোনতা আলপথে থেমে থাকে আবাদ
তার গোপন সাকিন আজও অজানা অচেনা
কাঁটাতার পেরতে গিয়ে ভাবি
সবুজ শ্যাওলায় ঢাকা টলটলে পুকুরের বুকে কিসের উচ্ছ্বাস?
পানিফলের গায়ে লেগে আছে যে জল তার কি কোন নিজস্ব ধর্ম আছে?
No comments:
Post a Comment